সূরা আলাক ( سُوْرَةُ الْعَلَقِ ) |
সূরা আলাক আল কুরআনের ৯৬তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এর আয়াত সংখ্যা ১৯টি। এ সূরার দ্বিতীয় আয়াতের শেষ শব্দ আলাক থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে।
শানে নুযুল
নাযিলের সময়ের দিক দিয়ে এ সূরাটি দুই ভাগে বিভক্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ৪০ বছর বয়সে হেরা গুহায় এই সূরার প্রথম পাঁচটি আয়াত সর্বপ্রথম নাযিল হয়। এটাই প্রথম ওহি। এর মাধ্যমেই সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবির নবুওয়াতের প্রকাশ ঘটেছে। সূরার বাকি ১৪টি আয়াত আরো পরে যখন মহানবি (সা.) কাবা শরিফে সালাত আদায় শুরু করেন এবং আবু জাহেল কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হন, তখন নাযিল হয়। আবু জাহেল একবার তার সঙ্গী সাথিদেরকে বলে মুহাম্মাদ কি তোমাদের সামনে সালাত আদায় করে, সিজদা দেয়? তারা বলল, হ্যাঁ। তখন সে বলল, লাত ও ওজ্জার শপথ, আমি যদি তাকে সালাত আদায় করতে দেখি তবে তার কাঁধে উটের নাড়িভুঁড়ি ঝুলিয়ে দেবো। সে একদিন দেখল, মহানবি (সা.) সালাত আদায় করছেন। সে অগ্রসর হলো কিন্তু পিছু হটে গেল এবং হাত দিয়ে আত্মরক্ষা করতে লাগল। তখন তাকে বলা হলো, তোমার কী হলো? সে বলল, নিশ্চয়ই তার মাঝে আর আমার মাঝে একটি আগুনের পরিখা দেখলাম, যা অত্যন্ত ভয়াবহ ও ডানাসমৃদ্ধ। এ প্রেক্ষাপটে শেষের আয়াতগুলো নাযিল হয়।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
| দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে। |
خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ 6
| ১. পাঠ করুন আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। |
خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ 6
| ২. সৃষ্টি করেছেন মানুষকে 'আলাক' হতে। |
اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ .
| ৩. পাঠ করুন, আর আপনার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত। |
الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ | ৪. যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। |
عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
| ৫. শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না। |
كَلَّا إِنَّ الْإِنْسَانَ لَيَطْغَى
| ৬. বস্তুত মানুষ তো সীমালঙ্ঘন করেই থাকে। |
أَن رَّاهُ اسْتَغْنَى :
| ৭. কারণ সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে। |
إِنَّ إِلَى رَبِّكَ الرَّجُعُي
| ৮. আপনার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন সুনিশ্চিত। |
أَرَهَيْتَ الَّذِي يَنْهَى .
| ৯. আপনি কি তাকে দেখেছেন, যে বাধা দেয়? |
عَبْدًا إِذَا صَلَّى
| ১০. এমন বান্দাকে- যখন সে সালাত আদায় করে? |
أَرَعَيْتَ إِنْ كَانَ عَلَى الْهُدَى
| ১১. আপনি লক্ষ্য করেছেন কি, যদি সে সৎ পথে থাকে |
أَوْ أَمَرَ بِالتَّقْوى .
| ১২. অথবা তাকওয়ার নির্দেশ দেয়। |
أَرَعَيْتَ إِن كَذَّبَ وَتَوَلَّى
| ১৩. আপনি কি লক্ষ্য করেছেন? যদি সে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়, |
أَلَمْ يَعْلَمُ بِأَنَّ اللَّهَ يَرَى *
| ১৪. তবে সে কি জানে না যে, আল্লাহ দেখেন |
كَلَّا لَبِنْ لَّمْ يَنْتَهِ ۚ لَنَسْفَعًا بِالنَّاصِيَةِ
| ১৫. সাবধান, সে যদি বিরত না হয় তবে আমি তাকে অবশ্যই হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাব, মস্তকের সম্মুখভাগের কেশগুচ্ছ ধরে- |
نَاصِيَةٍ كَاذِبَةٍ خَاطِئَةٍ .
| ১৬. মিথ্যাচারী, পাপিষ্ঠের কেশগুচ্ছ। |
فَلْيَدْعُ نَادِيَهُ .
| ১৭. অতএব সে তার পার্শ্বচরদিগকে আহ্বান করুক। |
سَنَدْعُ الزَّبَانِيَةَ
| ১৮. আমিও আহ্বান করব জাহান্নামের প্রহরীদের। |
كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ .
| ১৯. সাবধান! আপনি এর অনুসরণ করবেন না এবং সিজদা করুন ও আমার নিকটবর্তী হন। |
ব্যাখ্যা
প্রকাশ্যভাবেই এ দুইয়ের মধ্যে মিল রয়েছে। প্রথম আয়াতটি বাহ্যিক গঠন ও সৌন্দর্য বর্ণনা করে। আর দ্বিতীয় আয়াতটি মৌলিক সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ণনা করে। এই সূরার শুরুতে পড়া ও শিক্ষাদানের প্রতি আহ্বান করা হয়েছে। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর নাযিলকৃত অনন্য নিয়ামত ও অনুগ্রহ আল কুরআন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। মানব জীবনে প্রাচুর্য ও শক্তিমত্তার জন্য অবাধ্যাচরণ এবং এ নিয়ামত পেয়ে আল্লাহর আদেশ অমান্য করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এরপর আবু জাহেলের পাপাচার উল্লেখ করা হয়েছে। সে প্রিয়নবি (সা.)- কে সালাত আদায়ে বাধা দিত। সালাতরত অবস্থায় উটের নাড়িভুঁড়ি কাঁধে পেঁচিয়ে দিত। এরপর এরকম পাপিষ্ঠ কাফিরদের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। যদি তারা এহেন কার্যকলাপ থেকে বিরত না থাকে, তাদেরকে পাকড়াও করা হবে এবং ভয়ানক শাস্তি হিসেবে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। সর্বশেষে, বেশি বেশি সিজদা করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে- বান্দা যখন সিজদায় থাকে, তখন তার প্রতিপালকের অধিক নিকটবর্তী হয়।
সূরা আলাকের পূর্বের সূরা তীনে আল্লাহ তা'আলা মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে বলেন যে, নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি। সূরা আলাকে আল্লাহ তা'আলা বলেন, তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলাক তথা লেগে থাকা জমাট বাধা রক্ত থেকে।
সূরা আলাকের শেষ আয়াত সিজদার আয়াত। এ আয়াত যে পাঠ করে এবং শোনে, সবার ওপর তিলাওয়াতের সিজদা করা ওয়াজিব।
শিক্ষা এ সূরা থেকে শিক্ষা লাভ করা যায়- ১. আল্লাহ তা'আলা মহানবি (সা.)-এর প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। ২. আল্লাহ তা'আলা মানুষকে কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন। ৩. সম্পদের প্রাচুর্য মানুষকে আল্লাহ তা'আলার অবাধ্যতায় প্ররোচিত করে। ৪. আল্লাহ তা'আলার ইবাদাতে বাধা প্রদান করলে তার পরিণতি ভয়াবহ। ৫. আল্লাহ তা'আলা বান্দার প্রতি অসংখ্য অগণিত নিয়ামত দান করেছেন। ৬. বেশি বেশি সিজদা করলে আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য লাভ করা যায়।
|
প্রতিফলন ডায়েরি লিখন (বাড়ির কাজ) সূরা আলাকের শিক্ষা তোমার বাস্তব জীবনে চর্চা বা অনুশীলনের ক্ষেত্রগুলোর তালিকা প্রস্তুত করো। |
Read more